মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

খুচরা ক্রেতার জন্য সুখবর নেই

হাটে আনা শীতকালীন সবজি বিক্রির অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা। গত রোববার বগুড়ার মহাস্থান হাটে। ছবি: দৈনিক বাংলা
আসাফ-উদ-দৌলা, বগুড়া
প্রকাশিত
আসাফ-উদ-দৌলা, বগুড়া
প্রকাশিত : ১ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৪০
  • শীতকালীন সবজি

বগুড়ায় শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। এর সঙ্গে একটু একটু করে দামও কমছে। তবে দাম কমেছে শুধু পাইকারি বাজারে। খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এতে ব্যবসায়ীদের পকেট গরম হলেও কৃষক ও খুচরা ক্রেতাদের লাভ-ক্ষতি ও আয়-ব্যয়ের হিসাব করতে হচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম মহাস্থান হাটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন শীতের সবজির আমদানি বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় বাইরের পাইকাররা আসা শুরু করেননি। পাইকাররা এলেই হাট চাঙা হয়ে উঠবে।

গত রোববার সকাল ৮টার দিকে মহাস্থান হাটে দেখা যায়, প্রবেশমুখে কৃষকের সবজিবোঝাই ভ্যান লাইন ধরে দাঁড় করানো। একটু ভেতরে যেতেই নজরে পড়ে শিম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ১৫ জন কৃষক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ৫ কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। কিন্তু এ দামে সন্তুষ্ট নন তারা। কারণ, এক সপ্তাহ আগে ৫ কেজির দাম ছিল ৫০০ টাকা।

কৃষকদের একজন কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাটে অনেক সবজি উঠছে। কিন্তু ঢাকার পার্টি (পাইকারি ব্যবসায়ী) কম। বাইরের পার্টি না এলে দাম তো কম হবেই।

এমন অবস্থা শীতকালীন অন্য সবজির ক্ষেত্রেও। হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে মহাস্থান হাটে মুলা বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকায়। গত রোববার মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লম্বা জাতের বেগুন ছিল মণপ্রতি ৬০০, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অর্ধেকে নেমে হয়েছে ৩০০। তবে গোল বেগুনের দাম একই রকম আছে। মণপ্রতি বিক্রি হয় ১ হাজার ৪০০ টাকায়।

দাম কমেছে শসারও। গত সপ্তাহে শসা বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকায়। এখন মণপতি দাম ১ হাজার ৮০০। এ ক্ষেত্রেও শসার জোগান বেশি হওয়াকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা।

সপ্তাহখানেক আগে ফুলকপি বাজারে ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ। দাম কমেছে ৩০০ টাকা। সদর উপজেলার সাতশিমুলিয়া গ্রামের ফুলকপি চাষি মোস্তাফিজার বলেন, এতদিন আগাম ফুলকপি বিক্রি হয়েছে। এজন্য দাম বেশি ছিল। এখন সবার জমি থেকে ফুলকপি ওঠা শুরু করছে। তাই চাইলেও দাম বেশি পাচ্ছেন না। তবে হাটে মরিচ, লাউ ও বাঁধাকপির দাম কমেনি।

আলহাজ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী জানান, বাঁধাকপি সবে নামতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামের পাইকাররা এলে বাঁধাকপির দাম আরও বাড়বে। লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ২২ থেকে ২৫ টাকায়। মরিচ প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০। তবে মরিচের দাম কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

মহাস্থান হাটে কৃষকদের পণ্য বিক্রির জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘উত্তর-পশ্চিম শস্য বহুমুখীকরণ’ (এনসিডিপি) প্রকল্পের গ্রোয়ার্স মার্কেট রয়েছে। এই মার্কেটের পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, বর্তমানে হাট থেকে গড়ে ১০ ট্রাক সবজি বাইরের জেলায় যাচ্ছে। ভরা মৌসুমে দৈনিক অন্তত ৩০ ট্রাক সবজি সরবরাহ করা হয়। মূলত, শীতকালীন সবজির বাজার নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। তখন কৃষকদের পণ্য পড়ে থাকবে না।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার সবজি মহাস্থান হাটে বেচাকেনা হচ্ছে বলে দাবি করেন আমিনুর রহমান।

দাম কমেনি খুচরায়

পাইকারিতে দাম কমলেও বগুড়ার খুচরা বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। বগুড়া শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি ফুলকপির দাম ৮০ টাকা। এ ছাড়া শিম ৮০ থেকে ১০০, বেগুন ৫০, বরবটি ৬০, শসা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি ও লাউ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এক-দেড় সপ্তাহ ধরে এমন দাম চলছে বলে দাবি করেন রাজাবাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া।

তবে ভিন্ন চিত্র শহরের কলোনি বাজারে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম প্রায় ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, মহাস্থান হাট থেকে সবজি আনতে ভ্যানপ্রতি খরচ হয় ৩০০ টাকা। মণপ্রতি খাজনা দিতে হয় ২০ টাকা। এজন্য তাদের সবজির বিক্রয়মূল্যও বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় রবি মৌসুমে আগামসহ শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতের সবজির আবাদ হয়েছে। আগাম চাষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭৩ হাজার টন ফলন পাওয়া গেছে।


ঈদুল আজহা: শুরু হচ্ছে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার রেল ভবনের সম্মেলন কক্ষে ঈদ উপলক্ষ্যে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা ও বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তুতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।

তিনি বলেন, ‘আগামী ২ জুন থেকে শুরু হবে অগ্রিম টিকেট বিক্রি। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবারও শতভাগ আসন অনলাইনে বিক্রি করা হবে।’

অগ্রিম আসন বিক্রির তারিখ ঘোষণার পর মহাপরিচালক জানান, ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ১২ জুনের আসন বিক্রি হবে ২ জুন; ১৩ জুনের আসন বিক্রি হবে ৩ জুন; ১৪ জুনের আসন বিক্রি হবে ৪ জুন; ১৫ জুনের আসন বিক্রি হবে ৫ জুন; ১৬ জুনের আসন বিক্রি হবে ৬ জুন।

তিনি আরও বলেন, ‘এবার ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা হবে ৩৩ হাজার ৫০০টি। যা শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করা হবে। ২ জুন থেকে যাত্রা শুরুর ১০ দিন আগের আন্তঃনগর ট্রেনের আসন অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হবে। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করার সব আন্তঃনগর ট্রেনের সকাল ৮টায় এবং পূর্বাঞ্চলে চলাচল করা সব ট্রেনের আসন ২টায় বিক্রি করা হবে।’

বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগে বিশেষ ব্যবস্থায় ৫ দিনের ট্রেনের আসন বিক্রি করবে রেলওয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, উপসচিব মো. তৌফিক ইমাম (সচিবের একান্ত সচিব), বাংলাদেশ রেলওয়ের বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আরিফুজ্জামান, (রোলিং স্টক) পার্থ সরকার, (অপারেশন) এ এম সালাহ উদ্দীন প্রমুখ।

বিষয়:

উপজেলা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপে ৩০০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোট উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩০০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার এ কথা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৃতীয় ধাপে সারা দেশে ৩০০ প্লাটুন (এক প্লাটুনে ৩০ থেকে ৪০ সদস্য) বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৯ মে অনুষ্ঠাতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নিমিত্তে ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার-এর আওতায় ২৭ মে থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

বিষয়:

উপকূলজুড়ে ক্ষতের চিহ্ন, প্লাবিত লোকালয়

আপডেটেড ২৮ মে, ২০২৪ ১১:০৭
আওয়াল শেখ, খুলনা ব্যুরো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ফলে এর প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এতে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ফলে উকূলীয় এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। এখন উপকূলের মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার ৩টি জায়গার বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের, ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এ ছাড়া রাতভর ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়ার পাশাপাশি পাইকগাছা উপজেলার ৫টি পয়েন্ট ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, রোববার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই ৩টি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে এলাকা।

এ ছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব জায়গায় এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।

মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েকশ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে। ঝড়ের প্রভাবে অনেক বাড়িঘর পড়ে গেছে। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমি নিজ উদ্যোগে যাকে যা পারছি সহায়তা করছি।’

মহেশ্বরীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, ‘ইউনিয়নের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নয়ানি এলাকার বাঁধের নিচু জায়গা ছাপিয়ে সারারাত পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য চিংড়ির ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডব ও ভারী বৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী জানান, তার ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৫-৭টি গ্রামে নদীর পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নিচু বাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করেছে এলাকায়।

একইভাবে খুলনার দাকোপ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে যায়।

তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, ‘একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা লোনাপানি ঢুকে তলিয়ে গেছে। এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এত উঁচু জোয়ার আগে তিনি দেখেননি। ঢাকী ও শিবসা নদীর মোহনায় কামিনীবাসিয়া পুরাতন পুলিশ ক্যাম্পসংলগ্ন ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের অংশ খুব বেশি দুর্বল ছিল না। তবে বেশ কিছুটা নিচু হওয়ায় উচ্চ জোয়ারের চাপে পানি বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ভেতরে ঢোকে। এরপর বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে যায়।’

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মানুষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়। টানা বৃষ্টি ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরের জোয়ারের আগে তা মেরামতের চেষ্টা চলে।

এদিকে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঝড়পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।


ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিদ্যুৎহীন দেড় কোটি মানুষ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব থামলেও এর প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি এখনো চলছে। এ অবস্থায় সাগরে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ঢেউ। স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে। এ অবস্থায় দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ১ কোটি ৫৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এসব গ্রাহকের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অনেক স্থানে বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতি ১৫-১৬ ঘণ্টা অতিক্রম করেছে। ঝড় থেমে গেলে সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন বিদ্যুৎকর্মীরা।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১ কোটি ৫৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড় কমে যাওয়ার পর দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে দিতে আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রকৃত চিত্র এখনো জানা যায়নি।

পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, উপকূলীয় কয়েকটি জেলার সাগর তীরবর্তী উপজেলাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের লাইন চালু থাকলে জান-মালের ক্ষতি হতে পারে। আবার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদে সেগুলোর ক্ষতি হতে পারে, যা মেরামত করতে অন্তত সাত দিন সময় প্রয়োজন। এসব দিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১০

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারা বাংলা ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মোট ১০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় ছয়টি জেলায় তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে তিনজন, ভোলা ও বরিশালে দুইজন এবং সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মারা গেছেন।

আজ সোমবার ভোরে বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকায় বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন।

পুলিশ জানিয়েছে, চারজন রেন্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন। বাতাসের তীব্রতায় আকস্মিক পাশের চারতলা ভবনের একটি অংশের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হোটেল মালিক লোকমান ও কর্মচারী মোকছেদুল। আহত হন কর্মচারী সাকিব। তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

রেমালের তাণ্ডবে ভোলায় মারা গেছেন শিশুসহ দুইজন। এর মধ্যে বসতঘরে চাপা পড়ে মারা যান মনেজা খাতুন নামে এক নারী। তিনি লালমোহন উপজেলার চর উমেদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, রাতে মনেজা খাতুন তার এক নাতিকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। ঝোড়ো বাতাসে টিনের ঘর ভেঙে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, রাতে বাবা-মার সঙ্গে ঘু‌মিয়ে ছিল শিশু মাইশা। ভোরের দিকে ঘূ‌র্ণিঝড় রেমালে তাদের ঘরের পাশে গাছ ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মাইশার মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন ওই প‌রিবারের আ‌রও তিনজন।

আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল এলাকায় দেয়াল চাপায় মারা যান এক পথচারী। স্থানীয়রা জানায়, ঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় একটি দেয়ালের পাশে আশ্রয় নেন সাইফুল ইসলাম হৃদয়। হঠাৎ সীমানা দেয়ালটি ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে মারা যান হৃদয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে।

পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে দুমকি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়া‌নি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা।

পটুয়াখালীর বাউফলে ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যু হয়েছে মো. আব্দুল করিম নামে এক পথচারীর। আজ সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যান। একইদিন বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্লা‌বিত এলাকা থেকে বোন ও ফুফুকে রক্ষা করতে গিয়ে স্রোতে ভেসে প্রাণ হারান শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক।

কুমিল্লায় বিদ্যালয়ে ক্লাসরত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

আজ সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সাইফুল ইসলাম সাগর সদর দক্ষিণ উপজেলার শাকতলা গ্রামের অলি হোসেনের ছেলে। সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: বাগেরহাটে আনুমানিক ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতভর তাণ্ডবের পর আজ সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের তীব্রতা কমলেও বৃষ্টিপাত থামেনি।

জানা যায়, রেমালের প্রভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে জেলার ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো জেলা। এছাড়া জেলার প্রায় শতাধিক গ্রাম ৬ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ঘেরে। জেলার মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় সাড়ে ৩হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে আনুমানিক ৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ১ হাজার ৫শ ৮১ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলায় সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। আবহাওয়া পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে গতকাল রাতে জেলার ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ও কয়েক হাজার গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছিলো। তাদের জন্য শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। প্রয়োজন হলে নগদ অর্থ ও বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: ভোলায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে নারী নিহত

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আজ সোমবার ভোরে প্রচণ্ড বাতাসে ঘর ভেঙে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর বাসসের।

প্রাণ হারানো ৫৪ বছর বয়সী ওই নারীর নাম মনেজা খাতুন। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এতে ঘটনাস্থলে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তার বাবার নাম সিদ্দিক মাঝি। নিহতের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেতে ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে ৭ হাজার ৯০০ গবাদি পশু অবস্থান নিয়েছে মুজিব কেল্লাগুলোতে। রাতের জোয়ারে জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও, ভাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে যায়।

তিনি বলেন, ‘রিমালের প্রভাবে জেলার গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ঘর বাড়িরও। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে কাজ করছি।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়া বইছে উপকূলীয় জেলা ভোলায়। দুপুর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও রাত থেকে ভারী বর্ষণ চলছে। সেই সাথে তীব্র বাতাস বইছে। উত্তাল রয়েছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে পুরো জেলা।

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালে পটুয়াখালীতে গাছ পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৭ মে, ২০২৪ ১৫:১১
পটুয়াখালী প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় বসতঘরে গাছ পড়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। উপজেলার পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়া‌নি সুইসগেট এলাকায় আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।‌

প্রাণ হারানো ৭০ বছর বয়সী জয়নাল হাওলাদার ওই এলাকার বাসিন্দা।

পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের চেয়ারম‌্যান নজরুল গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রচণ্ড বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সময় হঠাৎ দু‌টি বড় বড় চাম্বল গাছ জয়নাল হাওলাদারের টিনের ঘরের ওপ‌র পড়লে ঘরের মধ্যে তি‌নি মারা যান।

তবে জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম জানান, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক স‌মস‌্যার কারণে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না, যে কারণে বিষয়‌টি তার জানা নেই।

চেয়ারম‌্যান নজরুল গাজী জানান, তার ইউ‌নিয়নের ১, ২, ৩ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ওই চার‌টি ওয়ার্ডের বা‌সিন্দাদের তি‌নি কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারেননি। যার ফলে তারা সবাই নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন।

তি‌নি জানান, সকালে যখন প্রচণ্ড বেগে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃ‌ষ্টি হচ্ছিল তখন জয়নাল হাওলাদার ও তার স্ত্রী ঘরে ছিলেন। ঘটনার সময় জয়নালের স্ত্রী রান্নাঘরে কাজে ব‌্যস্ত ছিলেন। আর জয়নাল ছিলেন ঘরের বারান্দায়। এ সময় ঘরের পাশে থাকা দু‌টি বড় বড় চাম্বল গাছ টিনের ওপরে পড়লে তা সরাস‌রি জয়নালের মাথায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

চেয়ারম‌্যান বলেন, ‘নেটওয়ার্ক সমস‌্যার কারণে তাৎক্ষণিক বিষয়‌টি প্রশাসনকে অবহিত করা সম্ভব হয়‌নি, তবে সঙ্গে সঙ্গে আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছি সবাই যাতে জানতে পারে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ১৯ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৭ মে, ২০২৪ ১৪:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় বেশ কিছু অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কথা ভেবে উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয় ধাপের ১৯টি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলাগুলো হলো- বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, বরিশাল জেলার গৌরনদী, আগুনঝারা, পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকি, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া, ভোলা জেলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, বরগুনা জেলার বামনা, পাথরঘাটা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি।

আজ সোমবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম এই তথ্য জানান।

ইসি সচিব বলেন, ‘মূলত আগামী ২৯ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ১০৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করতে মাঠ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যেই গতকাল রোববার সন্ধ্যায় থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হেনেছে। যার ফলে কোথাও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং ৯ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষিত হয়। এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী যেসব নির্বাচনী এলাকাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ, বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, কোথাও কোথাও গাছ উপড়ে গেছে এবং কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোট ১৯ উপজেলার ভোট আপাতত স্থগিত হয়েছে। এই ১৯টি উপজেলার ভোট স্থগিতের ফলে আগামী ২৯ মে ৯০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ১৯ উপজেলায় এখনও পানি জমে আছে। যার ফলে স্থানীয় প্রশাসন এসব এলাকার ভোট পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করেছে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বাগেরহাট জেলা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ মে, ২০২৪ ১৩:১৪
বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সম্পূর্ণ বাগেরহাট জেলা। গতকাল রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাস এখনো অব্যাহত রয়েছে।

জেলার মোংলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, ঝড়ে এখানকার প্রায় আট হাজার কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, ব্যাপক গাছপালা বিধ্বস্তসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা চাকশ্রী গ্রামের এক চিংড়ি চাষি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী ও খালে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে জোয়ারের পানির চাপে ঘেরের বাঁধ ভেঙে প্রায় এক লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে।’

একই এলাকার এক ঘের ব্যবসায়ী বলেন, ‘জোয়ারের পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। রাত থেকে আমার ঘেরসহ এখানকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আছে।’

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বারইখালি এলাকার আব্দুল্লাহ আল জিমি বলেন, বাতাসে আমাদের বাড়ির গাছগাছালি ভেঙে গেছে। এলাকা পুরো পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার ঘরের ভিতরে প্রায় এক ফুট পানি এবং বাইরে তিন চার ফুট পানিতে তলানো। কাল রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম কিন্তু ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে এসেছি। রান্নাবান্না না করতে পেরে কাল রাত থেকে এখনো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।

শরণখোলার তাফালবাড়ি এলাকার নাজমুল জানান, গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একটানা বাতাস হচ্ছে। ‌এই বাতাসে আমাদের বেশ কিছু গাছ পড়ে গেছে। আমাদের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।

তাফালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের একটি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সেখানকার মানুষরা অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তবে এখনো অনেকে নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখনো প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে।’

বাগেরহাটের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলনে, ‘রোববার দুপুরের পর থেকে এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ৭ জনের প্রাণহানি

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে দেশের উপকূল অঞ্চলে। এর প্রভাবে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রামে ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

আজ সোমবার সকালে আবহাওয়া অফিস বলছে, দুর্যোগের আগেই সঠিক পূর্বাভাস এবং মানুষের সচেতনতায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়েও তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে দুর্বল বাঁধের কারণে ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে উপকূলে। পটুয়াখালীতে উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে একজন এবং সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একজনের প্রাণ গেছে। মোংলায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে শিশুসহ দুইজন। এ ছাড়াও বরিশাল, ভোলা ও চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ রেমাল উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে খুলনার কয়রার নিকট অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিতে পারে।

এরই মধ্যে রেমাল উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে কয়রা, খুলনার কাছে অবস্থান করছে। এরপর ধীরে ধীরে সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ শান্ত হয়ে উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত বাড়বে ঢাকাসহ এর আশপাশের এলাকায়। সকাল থেকে ঢাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো।’

বিষয়:

ভূমিধস আতঙ্কে রোহিঙ্গারা, ক্যাম্পে বাড়তি সতর্কতা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
উখিয়া ও টেকনাফ প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর কারণে ভূমিধসপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। ঝড়ের প্রভাবে রোববার সকাল থেকে টেকনাফ-উখিয়ার কিছু জায়গায় দমকা ঝড়ো হাওয়া দেখা দিয়েছে। সেখানকার পাহাড় ও বনে ঝুঁকিতে থাকা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, তারা ভয়ে আছেন। ভারী বৃষ্টি হলে ভূমিধস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবকসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এ বিষয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪-এপিবিএনের এসপি আরেফিন জুয়েল বলেন, নিরাপদ ও সতর্ক থাকতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পে দাতা সংস্থা সেন্টারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রোহিঙ্গাদের বসতি পাহাড়ি এলাকায়। তাই ভারী বর্ষণ হলে ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা ফায়ার সার্ভিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এছাড়া পরিস্থিতি দেখে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হবে।’

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস পাহাড়বেষ্টিত এই ক্যাম্পগুলোতে। এখানকার ঘরগুলো ত্রিপল, বাঁশের কাঠামোতে তৈরি, ক্ষতি কমাতে এরই মধ্যে ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে করা হচ্ছে মাইকিং।

উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. সিদ্দিক বলেন, যারা পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তুলেছে, তারা ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে ভূমিধসের ভয়ে আছেন। আর যারা নিম্নাঞ্চলে থাকছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের মাঝেও। এ ছাড়া মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে।

উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমার বাড়ি পাহাড়ের নিচে, আগেও বৃষ্টির কারণে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মাইকিং চলছে, ভয়ে আছি জানি না কী হবে?’

আরআরআরসি কার্যালয় জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ক্যাম্পে স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যাম্পে এপিবিএন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মী বাহিনীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরাও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। তিন হাজারের বেশি ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন জানান, ক্যাম্প প্রশাসন ও কর্মরত সহযোগী সংস্থাগুলোর সমন্বিত চেষ্টায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সকালে আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাসহ ক্যাম্পে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুকিঁপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পাশের স্কুল ও খাদ্য বিতরণ সেন্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. রফিক বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত আনতে পারে এমন আশঙ্কার খবর ক্যাম্পে প্রচার করা হচ্ছে। পাহাড়ের তীরে ঝুপড়ি ঘর হওয়ায় তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নিলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

‘স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত মসজিদ ও লার্নিং সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগে অবহেলা না করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য মাইকিংসহ নানাভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে।


রেমালের প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর আগেই লঞ্চ বন্ধ ঘোষণা করে। এ রুটের যাত্রীদের বিকল্প হিসেবে ফেরিতে নদী পারাপার হতে অনুরোধ করেছে।

আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতি, দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, ‘নিয়মমাফিক গতকাল শনিবার রাত ৯টার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকল ধরনের লঞ্চ বন্ধ ছিল। আজ রোববার সকাল সোয়া ৬টা থেকে পুনরায় লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর বন্ধ হলেও আমাদের এই রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে বাতাস সৃষ্টি হলে নদী উত্তাল হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল পৌনে দশটা থেকে আবার লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেই। এর আগ পর্যন্ত এই রুটে ছোট-বড় মিলে ১৭টি লঞ্চ ছিল। লঞ্চগুলোকে ঘাটের অদূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।’

লঞ্চে যাত্রী পারাপার হয়, এমন একটি পরিবহনের ঘাট তত্বাবধায়ক ফিরোজ শেখ বলেন, ‘সকালে প্রথম একটি পরিবহনের যাত্রী লঞ্চে নদী পাড়ি দেয়। পরবর্তীতে নদী বেশি উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হলে আমরা ফেরিতে যাত্রী পারাপার শুরু করি। এখন তো লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে লঞ্চের সকল যাত্রী এখন ফেরিতেই নদী পাড়ি দিচ্ছেন।’

দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদী উত্তাল থাকলেও যানবাহনবোঝাই ফেরিগুলো ধীরগতিতে নদী পাড়ি দিচ্ছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে তেমন যানবাহন দেখা না গেলেও নদী পাড়ি দিতে আসা কিছু গাড়িকে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

এছাড়া লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট থেকে একটু দূরে নিরাপদ স্থানে লালু মন্ডল পাড়ায় লঞ্চগুলোকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ফাঁকা পন্টুন পড়ে আছে।’

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সকাল থেকে নদীপথে সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। তবে এই নৌপথ অনেকটা স্বাভাবিক থাকায় লঞ্চ মালিক সমিতি লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রাখে। তাদের পুনরায় বন্ধ রাখার তাগিদ দিলে পরবর্তীতে সকাল ৯টার পর পর চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেন।’

অনেক সময় কর্তৃপক্ষ বলার পরও স্থানীয়রা নদীর অবস্থা বুঝে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রাখেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘নদীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই লঞ্চ চালু করা হবে।

তবে যাত্রীদের নদী পাড়ি দিতে লঞ্চের পরিবর্তে ফেরিতে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এই রুটের লঞ্চগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি।’


banner close