বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

জঙ্গি অর্থায়নে যুক্ত ছিলেন চিকিৎসক কাওসার: সিটিটিসি

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় ভাঙ্গার চিকিৎসকও
ডা. মির্জা কাওসার
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০৮

কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. মির্জা কাওসার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অর্থদাতা হিসেবে কাজ করতেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি সাংগঠনিক কাজে অর্থ দেয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। গ্রেপ্তারের পর ডা. মির্জা কাওসার জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও অর্থের জোগানের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। সিটিটিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জের মেডিক্স কোচিং সেন্টার থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ডা. মির্জা কাওসারকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। তবে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তারা ডা. মির্জা কাওসারের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পান। পরে কিশোরগঞ্জ থেকে শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার তাকে আদালতে সোপর্দ করে এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

সিটিটিসির উপকমিশনার মিশুক চাকমা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ডা. মির্জা কাওসার আনসার আল ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য। সে সংগঠনের অর্থের জোগানদাতা হিসেবেও কাজ করত। তার সহযোগী আরও অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

ডা. মির্জা কাওসারের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চমাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় জুলফিকার ছদ্মনামের একজন আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের এক সদস্যের হাত ধরে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন ডা. মির্জা কাওসার। কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় কলেজের পেছনে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তার ওই বাসা সাংগঠনিকভাবে হালাকা বা বৈঠক করার জন্য ব্যবহার করা হতো।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, আনসার আল ইসলাম অনেক আগে থেকেই স্লিপার সেল বা কাট আউট পদ্ধতিতে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এ জন্য সংগঠনের বিভিন্ন সদস্যের বাসায় একেকটি স্লিপার সেলের দাওরা বা কোরআন-হাদিসের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। হালাকায় অংশ নেয়া কেউই অন্য কারও সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করে না। এ ছাড়া পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য তারা সিক্রেট অ্যাপস ব্যবহার করত।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ডা. মির্জা কাওসারের সহযোগীদের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পেয়েছি। তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর করা হচ্ছে।’

এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেনেরও জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে। গত ৮ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই সূত্র বলেছে, চিকিৎসা কর্মকর্তা জাকিরকে নজরদারি করা হচ্ছে। তাকেও যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

ডা. জাকির সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহসিন উদ্দিন ফকির জানান, জাকির ধার্মিক ছিল। কিন্তু সে নিষিদ্ধ কোনো জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থন করে কি না তা আমাদের জানা নেই। জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলেও তো তা আমাদের কাছে বলার কথা নয়। তিনি জানান, ৮ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যরা থানায় জিডি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।


উখিয়ায় আরসার আস্তানা: অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ আটক ২

গ্রেপ্তার হওয়া সলিম ও তার সহযোগি মো. রিয়াজ। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। যেখানে টানা ৬ ঘন্টার অভিযানে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেলসহ দুই সন্ত্রাসীকে আটক করেছে র‌্যাব।

বুধবার ভোর ৫টা থেকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন লাল পাহাড়ে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম।

অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি রকেল সেল, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড পিস্তলের এ্যামুনিশন, ১টি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ।

অভিযানে আটক করা হয়েছে, আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দুল আবেরার ছেলে মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও সলিমের অন্যতম সহযোগি ৮ নম্বর ক্যাম্পের মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে মো. রিয়াজ (২৭)।

অভিযান শেষে বেলা ১২ টায় ঘটনাস্থলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৫ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি শুরু করে। যার সূত্র ধরেই জানা যায় মাস্টার সলিম বর্তমানে বাংলাদেশের আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং তার নেতৃত্বে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এসময় দুইজন আরসা সন্ত্রাসী আটক করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম জানান, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ১৫ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস শুরু করে। সে মিয়ানমারে থাকাকালিন সেখানকার আরসা জোন কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগদান করে। আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের উপর পারদর্শী সে। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। আর রিয়াজ তার সহযোগি। এ ব্যাপারে মামলা করে আটককে উখিয়া থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত ১৬ জন নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূলে র‌্যাব শুরু থেকেই বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারি চালু রেখেছে। যার প্রেক্ষিতে ১১০ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তাদের নিকট থেকে ৫১.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ১২টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৩টি দেশিয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫৩ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪টি আইডি ও ৩৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল যায়। দলটি অভিযানে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক, গ্রেনেড, আইইডি এবং রকেট সেল নিষ্ক্রিয়করণ করে।


সবুজ অরণ্যের রাতারগুল

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ১৬:১০
সালাহউদ্দিন শুভ,কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

নির্জন বন, পাখির কিচিরমিচির, সাদা বকের ওড়াউড়ি, সবুজের প্রশান্তি মানেই রাতারগুল। প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজের সমারোহ চারদিকে। জলের ওপর বৃক্ষের বিস্তার রাতারগুল বনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বনের ৮০ শতাংশ অংশ উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত। এ বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। হিজল, বেত, কদম, করচ, মুর্তা, অর্জুন, ছাতিম, বট উল্লেখযোগ্য। এ বনে প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, বনের আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। ১৯৭৩ সালে বনের ৫০৪ একর বনভূমিকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এই বন ‘সুন্দরবন’ নামেই বেশি পরিচিত।

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলাবনের অবস্থান।

বাংলার অ্যামাজন নামে পরচিতি সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুল আমাদের দেশের একমাত্র ‘ফ্রেশ ওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট’ বা জলাবন।

সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল বন। জলে অর্ধেক ডুবে থাকা হাজারখানেক সবুজ উদ্ভিদ অতিক্রম করে ডিঙ্গি নৌকায় বনের গহিনে ভ্রমণ করতে পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান। নৌকায় ৪-৫ জন সহজেই বসা যায়, ভাড়া পড়ে ৭ থেকে ৮০০ টাকা। আবার যে কেউ দুইজন এক সাথে নৌকাভাড়া নিতে পারবেন।

জলে ডুবে থাকা এ বনে রয়েছে নানা প্রাণীর সমারোহ- সাপ, জোঁক, বেজি, গুইসাপ থেকে শুরু করে রয়েছে বক, মাছরাঙা, টিয়া, পানকৌড়ি, বুলবুলি, চিল, বালিহাঁস, শকুন, বাজপাখি। এছাড়া টেংরা, খলিসা, পাবদা ও কালবাউসসহ হরেক প্রজাতির মাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনটি পর্যটনের জন্য বেশ সম্ভবনাময়। ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়ে যাবে জল আর জঙ্গলের মিশেলে গড়ে উঠা এক অসম্ভব রূপবতী জলারণ্যের সাথে।

স্থানীয়রা জানান, এখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। তারা সারাদিন ঘুড়ে বেড়ান বনের মধ্যে। তাছাড়া আসে পাশে অনেক রিসোর্ট আছে। সেখানে পর্যটকরা থাকেন এবং এখানকার খাবার খেয়ে থাকেন।
এদিকে নৌকার মাঝি রুবেল আহমেদ জানান, আমি ২০০৮ থেকে এখানে নৌকা চালাই। আমার স্ত্রী ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে সংসার। সারাদিন নৌকা চালানোর পর ৬ থেকে ৭ শত টাকা হাতে থাকে। সংসারও ভালো চলে।

তিনি আরও জানান, নৌকায় করে ঘোরার সময় পানিতে হাত না দেওয়া ভালো। এখানে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় তো আছেই, বিষাক্ত সাপও পানিতে বা গাছে দেখতে পাওয়া যায় প্রায়। যারা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন। তবে বনের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। পলিথিন, বোতল, চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি পানিতে ফেলবেন না। আমাদের নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।

যেভাবে যাওয়া যায়

সিলেট শহরের খুব কাছেই এর অবস্থান। শহর থেকে গাড়িতে করে যেতে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। যাত্রাপথ আম্বরখানা, চৌকিদেখি হয়ে বিমানবন্দরকে পেছনে ফেলে হাতের ডানদিকের রাস্তা ধরে সাহেববাজারের দিকে। আম্বরখানার ইস্টার্ন প্লাজার সামনে থেকে লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। পথের দু'ধারে থাকা মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগানের সবুজ চোখে মেখে দ্রুতই পৌছে যাবেন গন্তব্যে। সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দেবে একেবারে রাতারগুলের দ্বারপ্রান্তে মোটরঘাট নামক স্থানে। আর নিজস্ব পরিবহনে গেলে সাহেববাজারের কাছে গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যাবেন রাতারগুল আর সেখানকার ফরেস্ট অফিসের খোঁজ। স্থানীয়রা রাতারগুলকে বলেন সুন্দরবন।


অটোরিকশা চালিয়েও এসএসসি পাস

আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ১০:৪৩
শিহাব আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ

অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি পড়াশুনা করে এসএসসি পাস করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মুন্সীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ হাসান। সামনে কলেজে আরও ভালো ফলাফল করার পরিকল্পনা তার। আব্দুল্লাহ মনে করে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। কাজ করেও যে লেখাপড়া চালানো সম্ভব তারই প্রমাণ দিয়েছে সে।

আব্দুল্লাহ মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে। তাই ভবিষ্যতে বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে দেশের জন্য কিছু করার অদম্য আগ্রহ তার।

সে মুন্সীগঞ্জ শহরের অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছুটে বেড়ায় রাত-দিন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, অনেক মেধাবী বিদেশে গিয়ে আর ফেরেন না। সে দেশেই থাকতে চায়। এভাবে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাক এটা তার পছন্দ হয় না।

আব্দুল্লাহ মানুষের পাশে থেকে বর্তমান প্রজন্মের যারা নেতিবাচক কাজে জড়িত, পড়ালেখায় অমনোযোগী তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করতে চায়। আব্দুল্লাহ সংসারে চরম দরিদ্রতা দেখে শিশু অবস্থায়ই বাসায় বাসায় পাঠদান করে উপার্জনের চেষ্টা করেছে। তবে এভাবে তার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে ভাড়ায় মিশুক চালাতে শুরু করে। পাশাপাশি অবসর সময়ে চালিয়ে গেছে পড়াশোনাও।

আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তনুজা আহম্মেদ বলেন, ‘নবম শ্রেণি থেকে আব্দুল্লাহ মিশুক চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন সে স্কুলেও ঠিকঠাক এসেছে। একটা ছেলে মায়ের কতটা বাধ্যগত হলে এ রকম হতে পারে তা বোঝাই যায়। ছেলেটি এ সমাজের দৃষ্টান্ত।’

তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আব্দুল্লাহর মাকে ফেলে চলে যায় তার বাবা। তার মা এখন ব্রেইনের রোগে আক্রান্ত। এত চ্যালেঞ্জের পরও আব্দুল্লাহ ‘এ’ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তার পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও সহপাঠীরাও খুশি।’’


নওগাঁয় ৪ লাখ ৩১ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার একটি আম বাগান থেকে তোলা ছবি। .ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ০৮:৫২
মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

নওগাঁয় আমচাষিদের প্রতিক্ষার অবসান হতে চলেছে। জেলা কৃষি অফিস থেকে আম পাড়ার ক্যালেন্ডার/সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২২ মে গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে আম নামানো শুরু হবে। চাষিরা জানান, এ বছর প্রচণ্ড দাবদাহ ও খরায় আম বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা বেশি করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- গুটি/স্থানীয় জাতের আম ২২ মে, গোপালভোগ ৩০ মে, ক্ষীরশাপাত/হিমসাগর ২ জুন, নাকফজলি ৫ জুন, ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ১০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, ফজলি ২৫ জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/বারি-১১/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাই পাড়ার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়।

এ বছর ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। যা থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের আশা। ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি আমচাসহ দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ হয়েছে।

জাত ভেদে আম বাগানের পরিমাণ নাকফজলি ৮৯৮ হেক্টর, ল্যাংড়া ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর, ফজলি ১ হাজার ৪০৮ হেক্টর, গোপালভোগ ৬১০ হেক্টর, ক্ষীরশাপাত ১ হাজার ৪৭ হেক্টর, বারি-৪ আম ২ হাজার ৪০২ হেক্টর, বারি-১১ আম ৪২ দশমিক ৫০ হেক্টর, মল্লিকা ৩৭ হেক্টর, কাটিমন ১৫৪ দশমিক ৫০ হেক্টর, গৌড়মতি ১৪৩ দশমিক ২৫ হেক্টর, হাড়িভাঙা ৪১ দশমিক ৭৫ হেক্টর, ব্যানানা ম্যাংগো ১০৭ দশমিক ৫০ হেক্টর, আশ্বিনা ২ হাজার ৩২২ দশমিক ৫০ হেক্টর, কুমড়াজালি ১৩ হেক্টর, গুটি/ স্থানীয় ৬০৭ হেক্টর এবং আম্রপালি ১৮ হাজার ৪২২ হেক্টর। জেলায় যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে আম্রপালি ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এ বছরের শুরুতে প্রচণ্ড শীত থাকায় ১৫-২০ দিন দেরিতে মুকুল আসে। এ ছাড়া এ বছর প্রচণ্ড খরা ও দাবদাহ বিরাজ করছে। আমের মৌসুমে এ পর্যন্ত দুইবার বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের ব্যাপক উপকার হয়েছে। বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় পানির স্বল্পতা রয়েছে। যেসব বাগান সেচের আওতায় সেগুলো সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় এখানকার আম সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় জেলায় ৬০ শতাংশ বাগানই আম্রপালি। এ জেলার আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ জেলার আম বিদেশেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

আমচাষিরা বলেন, এ বছর প্রচণ্ড দাবদাহ ও খরায় অনেক আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এতে গাছে কম পরিমাণ আম রয়েছে। এ বছর গাছে আম কিছুটা কম থাকলে গত বছরের তুলনায় ভালো দাম পাওয়া আশা চাষিদের। তবে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকলে লাভবান হতে পারবেন তারা।

সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আমচাষি নুরুজ্জামান বলেন, ‘আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের পরিমাণ। আমের মুকুল থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিঘাতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে এ বছর খরায় আরও ৪-৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ কিছুদিনের মধ্যে আম বাজারজাত করা হবে। গাছে আমের পরিমাণ কম হলেও দাম ভালো পেলে পুশিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’

বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা বলেন, প্রায় ৭৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান রয়েছে। কৃষিচর্চা অনুসরণ করে বাগান করা হয়েছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন- আমচাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার আম উৎপাদনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ার আশা। স্বাদ ও দাম ভালো পাওয়ায় আম্রপালি, বারি ও ব্যানানা জাতের বাগানের পরিমাণ বাড়ছে। রপ্তানি পরিসর বাড়াতে উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু বিক্রি

ক্ষতিগ্রস্ত ছড়াসংলগ্ন চা বাগান
কমলগঞ্জের সুনছড়া ও কামারছড়া থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় ক্ষতিগ্রস্ত ছড়া ও সংলগ্ন চা বাগানের টিলা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ০৩:১৯
মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন আলীনগর চা বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া ও কামারছড়া চা বাগান থেকে অবৈধভাবে বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে। ছড়া ও ছড়ার পার্শ্ববর্তী চায়ের টিলা খুঁড়ে সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ি ছড়া ও ছড়াসংলগ্ন চা বাগানের টিলা।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে রাস্তা, চায়ের টিলা, ছড়া, কালভার্ট ভাঙনসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে এবং সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব। এ ব্যাপারে চা বাগানের পক্ষ থেকে আদালতে মামলাও আছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সুনছড়া ও কামারছড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে দীর্ঘদিন ধরে সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রশাসনের যোগশাসজেই এ কাজ চলছে। সে কারণে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকেরা লোক দেখানো অভিযান করলেও এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। প্রশাসনের লোকেরা আসার আগেই বালু উত্তোলনকারী চক্র পালিয়ে যায়।

বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ট্রাকের কারণে চা বাগানের রাস্তাঘাট চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে বাগানের চা-পাতা পরিবহন ও অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এবং চা বাগানের নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাগানের শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তারা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়াকে সিলিকাবালু সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৯টিকে অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা গ্রহীতাদের অনিয়ন্ত্রিত ও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কমলগঞ্জসহ জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।

এ ব্যাপারে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। শুনানি শেষে ২১ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, সুনছড়া থেকে ইজারা ছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন এখান থেকে ৩০-৫০ হাজার টাকার সিলিকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। এ বালুর বাজার মূল্য অনেক বেশি।

আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিষয়ে ইতোপূর্বে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে চা বাগানের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার আদালতে মামলাও চলমান আছে। এ চক্রে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় চা বাগানের রাস্তাঘাটসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং আমরাও আতঙ্কগ্রস্ত।’

পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাড. শাহ সাহেদা বলেন, আদালতের রায় অমান্য করে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আদালত অবমাননার শামিল। অধিকাংশ ছড়া চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। ২০২৩ সালের বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী চা শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য চা বাগানের ভেতরে বালুমহাল লিজ দেওয়া যায় না।

কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুয়ান বলেন, সুনছড়া ও কামারছড়ায় কোনো ইজারা হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন জানান, ইতোপূর্বে অভিযান করে জরিমানাও করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সেফটি অব লাইফকে প্রাধান্য দিয়েছি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো

জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক। মৃত্যুপুরী থেকে ফেরা এসব নাবিককে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র, বন্দর চেয়ারম্যান, জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান ফুলেল শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের অভ্যর্থনা জানাতে ছুটে এসেছিল প্রতিটি নাবিকের পরিবার ও স্বজনরা। এমন আবেগঘন মুহূর্তে পরিবারের সান্নিধ্যে আপ্লুত নাবিকরাও বুঝতে পারলেন তাদের প্রতি পরিবারের অফুরন্ত ভালোবাসা, বিপুল সাংবাদিকদের উপস্থিতি তাদের জানিয়ে দিল দেশবাসীও সার্বক্ষণিক রেখেছেন তাদের খবর। সবার প্রার্থনায়, সবার ভালোবাসায় ছিলেন তারা।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে বন্দি হওয়া ও বন্দিদশায় পার করা দিনগুলোর কথা এতদিন বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ বললেন, ‘যেদিন আমরা দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছু অতি দ্রুত ঘটেছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে। আমি আর সেকেন্ড অফিসার আমাদের হিডেন রুমে যেতে পারিনি। সেকেন্ড অফিসার আটক হওয়ার পর আমি গিয়ে দেখি একে-৪৭ রাইফেল তাক করে আছে তার দিকে। আমি যেতেই আমার দিকেও তারা একে-৪৭ রাইফেল তাক করে। তবে আমি নিজেকে স্ট্রং (শক্ত) রেখেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে আমি হাত তুলে সারেন্ডার করে বললাম, আমরা বাংলাদেশি, আমরা মুসলিম। আমরা রোজা আছি। দস্যুরা সবাইকে ডাকতে বলে। সবাই চলে আসে সেখানে। এরপর আমরা সবাই সেখানেই ব্রিজের মধ্যে সারাদিন সারারাত ছিলাম।’

ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ আরও বলেন, ‘আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মৃত্যুর হুমকি ছিল। নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করছিল। মনে ভয় ছিল; কিন্তু সাহস রেখেছি। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। আমাদের ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয়- সেদিকে নজর রেখেছি। সেফটি অব লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ার দস্যুদের কবল থেকে আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। সরকার কৌশলগতভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি বলেছিলাম, বিদেশি নৌবাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারও প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে ফিরতে পেরেছি, পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এ এমন অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’

গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং এক নম্বর কনটেইনার টার্মিনালে নাবিকদের নিয়ে ভেড়ে কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনি। নাবিকদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্বজনদের পাশাপাশি কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখানে উপস্থিত ছিলেন।

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর নাবিকদের কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। জেটিতে তাদের কারও হাতে ছিল ফুল, কারও হাতে কেক।


হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ, জিডি কাদের মির্জার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নোয়াখালী প্রতিনিধি

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওবায়দুল কাদেরের ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় থানায় জিডি করেছেন কাদের মির্জা।

আজ মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

সাধারণ ডায়েরিতে কাদের মির্জা উল্লেখ করেন, আগামী ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা গত কয়েকদিন ধরে একটি নম্বর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তিনি (মিজানুর রহমান বাদল) কোম্পানীগঞ্জের পার্শ্ববর্তী দাগনভূঞা, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও সেনবাগ উপজেলার অস্ত্রধারীদের এনে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছেন।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকন, মো. আইয়ুব আলী, সালেকিন রিমন, জাহেদুল হক কচি, আবদুর রেজ্জাককে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রেখে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে।

সাধারণ ডায়েরিতে কাদের মির্জা আরও উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী পরিচয় দিয়ে শাহাদাত হোসেন বসুরহাট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রাসেল, বসুরহাট পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্যা হামিদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আইনুল মারুফকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি তিনি সরকারের উচ্চপদের কর্মকর্তাদের অবগত করেন।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইকবাল কবীর ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে শাহদাত হোসেনের পক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট একরামুল হক টুটুল ও তামান্না ফেরদৌস। ইসির পক্ষে ছিলেন, ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ ও ব্যারিস্টার আশফাকুর রহমান।

অ্যাডভোকেট একরামুল হক টুটুল ও তামান্না ফেরদৌস এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, গত ৯ মে আপিলেও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

গত ৫ মে যাচাই-বাছাইয়ে হলফনামায় মামলা ও আয় বিবরণীর তথ্য গোপন রাখায় শাহদাত হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বরাবর আপিল করেন শাহদাত। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান মাহবুবুর রহমান একই কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। পরে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন শাহদাত হোসেন।

জানা যায়, আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে সেতুমন্ত্রীর ভাইসহ চারজন প্রার্থী হয়েছেন। বাকি তিন প্রার্থী হলেন- উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর আলী।


অবশেষে স্বজনদের দেখা পেলেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক

চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১৮:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ জন নাবিক নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এসে পৌঁছেছে। জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩ তাদের নিয়ে আসে। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে জাহাজটি জেটিতে পৌঁছায়।

জাহাজের নাবিকরা এরই মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। দীর্ঘদিন প্রাণভয়ে থাকার পর অবশেষে স্বজনদের কাছে পেয়ে নাবিকদের অনেকে কেঁদে ফেলেন। নাবিকদের বরণ করতে ফুল হাতে জেটিতে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্বজনরা।

জলদস্যুদের কবলে থাকার দিনগুলোকে বিভিষীকার দিন বলে আখ্যা দেন নাবিকদের বরণ করতে আসা একজন স্বজন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সেই দিনগুলোকে আর মনে করতে চাই না।’

এক মাস আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙ্গর করেছে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়। কিন্তু দেশে ফিরলেও স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের আরও এক দিন অপেক্ষা করতে হয়।

গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে যাওয়ার পথে ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।

৩২ দিন জিম্মি থাকার পর ১৩ এপ্রিল জলদস্যুদের থেকে মুক্ত হয়ে দুবাই যায় জাহাজটি। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধ জাহাজের পাহারায় এমভি আবদুল্লাহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হয়।


বিএসএফের বাধায় ৩ বছর ধরে বন্ধ মনু বাঁধের কাজ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১১:৩৭
এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রায় তিন বছরেও মেরামত সম্পন্ন হয়নি মনু নদীর বাঁধ। ভারত সরকারের নানা অজুহাত ও বিএসএফের বাধার মুখে প্রতিরক্ষা বাঁধটির বাংলাদেশ অংশে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তে ১ হাজার ৪০০ মিটার এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ বর্ষায় বন্যাতঙ্কে রয়েছে। চাতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটিও হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, যৌথ নদী কমিশন মনু নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

মনু নদীর ভাঙন আর বন্যা থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলাকে রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করলেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এতে বাধা দেয়। তাদের বাধায় এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তের মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি পয়েন্টে ১ হাজার ৪০০ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শরীফপুর ইউনিয়নের বাঁধের এ অংশ অনেক আগেই নদীর সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বর্ষায় নদীতে পানি বাড়লে কোনটি প্রতিরক্ষা বাঁধ, কোনটি নদী, আর কোনটি গ্রাম তা বোঝার উপায় থাকে না।

সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নের মানুষ এখন বন্যাতঙ্কে রয়েছে। ২০১৮ সালের বন্যায় পুরো এই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ওই সময় চাতলাপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বাঁধ মেরামতের কাজের কথা ভারতকে জানানো হলেও দীর্ঘদিন সাড়া মেলেনি। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে যৌথ নদী কমিশনের কাছে এ কাজের অনুমতি চেয়ে ডিও চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও ভারতপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের মার্চে ভারত তাদের পাঁচটি স্থানে নতুন করে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সম্মতি চায়। এ স্থানগুলো তাদের অংশে পড়েছে বলে ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে। এতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন সীমান্তের নদীভাঙন প্রতিরোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, বর্ষার আগেই নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করতে হবে। না হলে বন্যার আতঙ্কে থাকতে হবে।

পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, গত ১ এপ্রিল পাউবো তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে একটি টিম সীমান্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। সে সময় ভারত সরকারের দাবি করা পাঁচটি স্থান বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় না থাকায় এ ব্যাপারে
সঠিক কোনো কিছু জানা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে কাজ শুরু করার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে অন্যপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর আরও কয়েকবার আবেদন করা হয়। সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে মনু নদীর ভারত অংশে ভাঙনের ৫টি স্থান দেখার জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিএসএফ স্থানগুলো দেখার অনুমতি দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


মহাসড়কে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পথসভা!  

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চেয়ারম্যানপ্রার্থীর পথসভা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১১:৩৭
চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানপদপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী যান চলাচল বন্ধ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পথসভা করেছেন। গতকাল রোববার রাতে চকরিয়া পৌরশহরের কাজী মার্কেট চত্বরে মঞ্চ তৈরি করে এ পথসভা করা হয়। জনসমাগমে সড়ক ও মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ৩ ঘণ্টা।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করা যাবে না। প্রার্থীদের পক্ষে কোনো ব্যক্তিও অনুরূপ জনসভা ও পথসভা করতে পারবেন না। কোনো পথসভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে সভার জায়গা ও সময় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে, যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি উপজেলা নির্বাচন আচরণবিধির ৭ ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো বিধান মানেনি উপজেলা চেয়ারম্যানপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদি।

সড়কের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে যান ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে পথসভায় জড়ো হন। এ সময় মহাসড়কের একপাশে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে পথসভা শেষ হলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় লোকজন ধাক্কাধাক্কি করে কোনো রকমে চলাচল করে। এতে চুরি ছিনতাইয়ের মতো একাধিক ঘটনাও ঘটে।

চেয়ারম্যানপ্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদির এ পথসভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ও পৌর যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর হোছাইন।

চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী আচরণবিধি বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে পথসভা হয়নি। মার্কেটের গাড়ি পার্কিং ও পাশের সড়কে হয়েছে। এর কারণে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে, তা ঠিক। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ চেয়ারম্যানপ্রার্থী সাঈদী দেখবেন।

কক্সবাজারগামী এক পর্যটক বলেন, ‘এ সড়কটি কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থীর লোকজন পথসভা করেছেন। এ সভার কারণে যানজটের কবলে পড়ে চকরিয়া পৌরশহর পার হতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লেগেছে।’ এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদীর সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কাজী মার্কেট চত্বরের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে পথসভা করা হয়েছে। আমার জনপ্রিয়তা আছে, জনসমাগম হয়েছে। তবে মহাসড়কে পথসভা করিনি। তারপরও জনসাধারণের সুবিধার্থে আমরা সভা দীর্ঘ করিনি।

মহাসড়কে পথসভার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মহাসড়কে পথসভা করার খবর জানা নেই। এ বিষয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। মহাসড়কে পথসভা করে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আগামী ২১ মে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


যুবককে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনায় তোলপাড়

আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১১:৩৬
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক যুবককে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তবে আবার কয়েক ঘণ্টা পর সেই ভিডিও ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

মারধরের শিকার ওই যুবকের নাম সোহেল রানা (৩০)। তিনি ঘাটাইল উপজেলার লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের আবদুল হামিদের ছেলে। পেশায় একজন গাড়িচালক। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ওই নারীর পরিবার। তাদের ফাঁসানো হচ্ছে বলে যুবকের পরিবারের দাবি।

নেটিজেনরা বলছেন, আইন হাতে তুলে নিয়ে এমন অমানবিক নির্যাতন ও মারধর করা ঠিক হয়নি। অপরাধী হলে প্রচলিত আইনেই বিচার হতো। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। এ নিয়ে তীব্র নিন্দাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এ ঘটনায় মোবারক হোসেন ফনি নামের একজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘দেশে মাতব্বর বেড়ে এই দশা। আসুন আমরা সামাজিক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই।’

নজরুল ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘পাপ করলে শাস্তি পাবে কিন্তু গাছে বেঁধে নির্যাতন এটা অমানবিক। আইন আইনের গতিতে চলে আর যে মেয়েটাকে শ্লীলতাহানি করা হলো তার জীবনের কি হবে, তাকে তো জামাইও নিবে না।’

মেহেদী হাসান সিয়াম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘যদি অপরাধ করেই থাকে তাহলে, তদন্ত সাপেক্ষে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। এভাবে আইন যারা নিজেরা হাতে তুলে নিয়েছে তারাও অনেক বড় আর বেশি অন্যায় ও অপরাধ করে ফেলেছে।’

এদিকে, নারীর দায়ের করা অভিযোগে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধারের পর ওইদিনই জেলে পাঠিয়েছেন। একাধিকবার ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি তারা।

অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানায় ওই যুবকের পরিবার। এ বিষয়ে ওই যুবকের বড় ভাই মো. সোলায়মান বলেন, ‘একটি চক্রান্তমূলক ঘটনায় তাদের ফাঁসানো হচ্ছে। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. বিপন খান বলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়াটাই অপরাধ। অপরাধীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। এতে প্রচলিত আইনেই তার বিচার হবে। তবে মধ্যযোগীয় কায়দায় মারধর করার কারও অধিকার নেই।

গত শনিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে এক যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে রাতভর তাকে আটকে রেখে গাছে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ ওঠে। পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ওই যুবকের পরিবারের। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে কয়েক ঘণ্টা পর তা আবার সরিয়ে ফেলা হয়।


পরিবেশ রক্ষায় মানবিক পাঠশালার প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর

আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১০:৫৭
ইউসুফ বিন হোছাইন, (চকরিয়া-পেকুয়া) কক্সবাজার

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছুড়ে ফেলা বা ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিলেই মিলছে উপহার। পরিবেশ দূষণরোধ ও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষায় এ উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক সংগঠন ‘মানবিক পাঠশালা’। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে উপহার নিন’ নামের এ কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি।

গত ২৯ এপ্রিল চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ ক্যাম্পেইনের যাত্রা শুরু হয়েছে। ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন মানবিক পাঠশালার উপদেষ্টা ও চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক জসিম উদ্দিন। প্রতিদিন চকরিয়া পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এ কর্মসূচি চলছে।

ছুড়ে ফেলা বা ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে উপহার পাওয়া শিক্ষার্থী রিজভী বলেন, ‘এই উদ্যোগটি অনন্য। প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র পাওয়া যায়। এর বিনিময়ে যে উপহার পাব, তা কখনো ভাবিনি। অনেক ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে আমরা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরিতে উৎসাহিত হচ্ছি।’

এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে মানবিক পাঠশালার উপদেষ্টা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এই উদ্যোগটি প্রসংশনীয়। শুরু থেকেই দারুণ সাড়া পাচ্ছে সংগঠনটি। উপহার হিসেবে বই পেয়ে দারুণ খুশি শিক্ষার্থীরাও। এখান থেকে আমরা দুটি জিনিস শিখছি। একটি পরিবেশ থেকে শিক্ষা, অন্যটি বই থেকে শিক্ষা। সুন্দর আয়োজনের জন্য নিশ্চয়ই মানবিক পাঠশালা প্রশংসার দাবিদার।’

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তাসিন রাজ্জাক আলভি বলেন, রাস্তাঘাটে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলা হয়। এতে পরিবেশের সৌন্দর্য হানি ঘটছে। এসব বর্জ্য পরিষ্কারের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিলেই সবার হাতে উপহার তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশবান্ধব মন-মানসিকতার সৃষ্টি হচ্ছে। জনসচেতনতা ও বসবাসযোগ্য সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সবাইকে উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মানবিক পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক ইরানুল ইসলাম জানান, পানির বোতল ও চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী রাস্তাঘাটে ফেলায় সামাজিক পরিবেশ যেমন দূষণ করে তেমনি জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে এ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ‘মানবিক পাঠশালা’। চকরিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হয়েছে যেখানে বই, গাছের চারা ও অন্যান্য পরিবেশবান্ধব উপহার ও বিন সাজানো আছে। জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা এই বুথে ব্যবহার্য প্লাস্টিক জমা দেবেন এবং উপহার গ্রহণ করবেন।


দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার বাদ পড়েনি হাসপাতালও

আপডেটেড ১৪ মে, ২০২৪ ১০:০২
খোরশেদ আলম, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী)

দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানপ্রার্থীর পোস্টার। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের রঙিন পোস্টারও রয়েছে। কোনো ধরনের নির্বাচনী বিধি না মেনেই এসব পোস্টার লাগানো হয়েছে সরকারি স্থাপনাতেও। বাদ পড়েনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়াল পর্যন্ত। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে এমনই অবস্থা দেখা গেছে নির্বাচনী এলাকায়।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন, দেয়াল, গাছ, বিদ্যুৎসহ টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার লাগানো নিষেধ। সরকারি স্থাপনাতেও পোস্টার লাগানো নিষেধ। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তোয়াক্কা করছেন না প্রার্থীরা। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারে মিছিল নিষিদ্ধ থাকলেও মানছেন না কেউই। প্রার্থীরা নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল নিয়ে ঘুরছেন। আবার এই মিছিলের ছবি ও ভিডিও নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে মহড়া করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়ালে প্রার্থীদের ছবি লাগানো হয়েছে। নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বিভিন্ন স্থাপনায় লাগানো হয়েছে পোস্টার। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রকেয়া বেগম রঙ্গিন পোস্টার করে বিভিন্ন দেয়ালে লাগিয়েছেন।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী রয়েছেন। সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ প ম বাবুল বাবু। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ও উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মনির ইসলাম মনির।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে খলিলুর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক রুবেল। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রুবিনা আক্তার, আয়েশা আক্তার পারুল, রোকেয়া বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা প্রার্থীদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।


banner close