মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

নিরাময় কেন্দ্রে মাদক, নির্যাতন-যৌনতার ফাঁদ

গ্রাফিক্স দৈনিক বাংলা
শাহরিয়ার হাসান
প্রকাশিত
শাহরিয়ার হাসান
প্রকাশিত : ৬ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:২১

মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য লাইসেন্স পাওয়া যেসব বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে তার অধিকাংশেরই অবস্থা খুব নাজুক। এসবের কোথাও চলে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা ও সেবন। কোথাও চিকিৎসার নামে টর্চার সেলে রেখে চলে শারীরিক নির্যাতন। কোথাও আবার যৌনতার ফাঁদ পেতে রোগী ও পরিবারের সদস্যদের করা হয় জিম্মি। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগীকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো অভিযোগও আছে।

মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক ও তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্তেই উঠে এসেছে এমন অনেক অভিযোগ।

আবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ মালিকই মাদকাসক্ত। ওই সব কেন্দ্রে পুনর্বাসনে থাকা ছেলেদের দিয়েই নতুনদের সেবা করানো হয়। খাতায় নাম থাকলেও বাস্তবে চিকিৎসকই থাকেন না। ঘুমের ওষুধ দিয়ে রোগীকে নিস্তেজ করে রাখা হয় মাসের পর মাস। তাদের অপচিকিৎসায় রোগীরা ভালো তো হন-ই না, উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, নানা অভিযোগে চলতি বছরে ১০টিসহ গত সাত বছরে ৩৯টি নিরাময় কেন্দ্র সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। বন্ধের সুপারিশ পড়ে আছে আরও অন্তত ২১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় না বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, শুরুর দিকে নিরাময় কেন্দ্র করতে সেভাবে কেউ আগ্রহ দেখাত না। তাই কেউ আগ্রহী হলেই ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হতো। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। জেলা পর্যবেক্ষণ কমিটির তদন্ত রিপোর্ট ও সুপারিশ না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ১০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ২০১৫ সালে পাঁচটি, ২০১৬ সালে চারটি, ২০১৭ সালে পাঁচটি, ২০১৯ সালে তিনটি, ২০২০ সালে চারটি এবং ২০২১ সালে চারটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে ১১টির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ, সাতটির বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের, ২১টির বিরুদ্ধে টর্চার সেলে রেখে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মাদক বাণিজ্যের অভিযোগে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি নোয়াখালীর চৌমুহনীর ‘ক্রিয়া’ মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। রোগীকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতনের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ, সেটি পরিবারকে দেখিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ৭ জানুয়ারি গাজীপুরের ‘ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র’র লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ওই মাসেই বন্ধ করে দেয়া হয় রাজশাহীর কাজীহাটার ‘চলো বদলাই’, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ‘দীপ্তি’, গাজীপুরের জয়দেবপুরের ‘বন্ধন মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’। তাদের বিরুদ্ধে যথাক্রমে টর্চার সেলে রেখে নির্যাতন, মাদক বিক্রি, আর অচেতন করে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করার মতো অভিযোগ ছিল।

গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র বন্ধের পটভূমি ছিল খুবই ভয়ংকর। চলচ্চিত্র নায়ক অনিক রহমান অভিকে নয় মাস আটকে রেখে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের বিরুদ্ধে। র‍্যাব ওই কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে অভিসহ ২০ জনকে উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, কেন্দ্রটিতে পুনর্বাসনের জন্য আসা অভি এবং অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরের ওপর পাশবিক যৌন নির্যাতন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।

কেন্দ্রটির পরিচালক আরিফ মাহবুব রোমান জানান, তিনি নিজেও একসময় (২০০৩ সালে) মাদকাসক্ত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ছেলে হঠাৎ করেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। লোকলজ্জার ভয়ে তিনি বিষয়টি কাউকে না জানালেও পরিবারের সদস্য মিলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে গোপনে মগবাজারের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সবগুলো ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ছেলের চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিছুদিন পর তারা সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, ছেলেটিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তদন্তে উঠে আসে, সেখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই নেই। নেই চিকিৎসক বা নার্স। ছিল একটি টর্চার সেল, যেখানে রোগীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দিনভর নির্যাতন করা হতো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইশরাত চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, নানা অভিযোগের ‍মুখে নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে।

বাতিলের সুপারিশ আরও ২১টির বিরুদ্ধে

সুস্থ ফিরোজকে মাদকাসক্ত সাজিয়ে তার প্রথম স্ত্রী আকলিমা আক্তারের পরিবার উত্তরার রেইনবো মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২২ দিন আটকে রাখে। বিষয়টি জানাজানি হলে গত ৪ অক্টোবর তড়িঘড়ি করে ফিরোজকে আকলিমার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয় রেইনবো। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রটির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে ঘটনার সত্যতা পায়। ৬ অক্টোবর অধিদপ্তরে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগেও ২০১৯ সালে জমিসংক্রান্ত একটি বিরোধের জোরে এক ব্যক্তিকে আটকে রাখার অভিযোগ ছিল কেন্দ্রটির বিরুদ্ধে। তাই এর লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগীদের এমন জিম্মিদশায় ফেলার জন্য ও নানা অনিয়মে সারা দেশে আরও ২১টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ জমা রয়েছে।

লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে কয়েক শ নিরাময় কেন্দ্র

মাদকের ভয়াবহ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে যত্রতত্র মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুমোদন না নিয়ে গড়ে ওঠা এসব তথাকথিত কেন্দ্র চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের নামে মাদকাসক্তদের নির্যাতন করে। নজরদারির বাইরে থাকা এসব নিরাময় কেন্দ্রে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের অবাধ ব্যবহার চলছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক কেন্দ্রই গড়ে তুলেছেন মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা। ফলে ওই সব কেন্দ্রে যাওয়া রোগীদের স্বজনরা বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীতে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩০০। সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭০০-৮০০। সুযোগ-সুবিধার বালাই না থাকলেও সাইনবোর্ড লাগিয়ে ব্যবসা খুলে বসেছেন তারা।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে হলি মাইন্ড মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র সিলগালা করে দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

কেন্দ্রটির চেয়ারম্যান আ. আজিজ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা তো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স নিয়ে এটা পরিচালনা করতে হয়। সেটাই তো জানি না।’

১১ ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

২০২০ সালে রাজধানীর আদাবরে অবস্থিত মাইন্ড এইড মানসিক ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যা করেন সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সে সময় পুলিশ জানায়, মানসিকভাবে অসুস্থ আনিসুল করিমের মৃত্যু আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশ সে ঘটনায় নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকসহ ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে।

২০২১ সালে চিকিৎসাধীন মাহফুজুর রহমানকে ‘পিটিয়ে হত্যা’র ঘটনা ঘটে যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। পরে জানা যায়, সেটি অনুমোদনহীন কেন্দ্র ছিল। ২০১৪ সালে রাজধানীর বারিধারায় ‘প্রত্যয়’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে আসাদুল ইসলাম নামে এক রোগীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তাকে চিকিৎসার নামে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। একই বছর চট্টগ্রামের ছোটপুলে ‘ছায়ানীড়’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে নিজাম উদ্দিন নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় এনজিও পরিচালিত ‘প্রত্যাশা’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেলাল নামে এক মুদি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। অন্য রোগীরা বলেন, নির্মম নির্যাতনের কারণে হেলালের মৃত্যু হয়েছে।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না কেউ

দেশে বিপুলসংখ্যক মাদকসেবীর বেশির ভাগই কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে ৩৭০টি। এ কেন্দ্রগুলোতে মোট শয্যাসংখ্যা ৫ হাজার। এর মধ্যে সরকারি কেন্দ্রের সংখ্যা ৪টি। সেখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব ২০০ জনকে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখা থেকে জানা যায়, নিরাময় কেন্দ্রের লাইসেন্স পেতে অন্তত ১৩টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে সার্বক্ষণিক একাধিক চিকিৎসক, নার্স, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, প্যাথলজি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ও চিত্তবিনোদন কেন্দ্র থাকা বাধ্যতামূলক। বছরের পর বছর অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলে এলেও কেন্দ্রগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে পারছে না অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে রোগী ভর্তির পর প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। এর বাইরে নানা কৌশলে সেবা ফির নামে অর্থ আদায় করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক নিরাময় কেন্দ্র রোগী ভর্তি করার পর আর ছাড়তে রাজি হয় না। বছরের পর বছর রোগীকে আটকে রেখে চিকিৎসার নামে টাকা আদায় করতে থাকে।

ছেলেকে ঢাকার একটি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা দিতে বগুড়া থেকে আসা মা জুলেখা দৈনিক বাংলাকে বলেন, চিকিৎসায় কোনো উন্নতি হয় না। শুধু টাকা যায়। বাসায় গিয়ে আবার সেই ইনজেকশন নেয়। এই অভিভাবক আরও অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় ওই নিরাময় কেন্দ্র থেকেই তার ছেলে নতুন করে ইয়াবা খাওয়া ধরেছে।

মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘মানস’-এর সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. অরূপ রতন চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে নিরাময় কেন্দ্রের বেশ কিছু দায়িত্ব আছে। তাদের প্রধান কাজ রোগীর আসক্তি দূর করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা। তবে অসৎ পুনর্বাসন কেন্দ্র যে নেই, তা নয়। এটি নিয়েও সংশ্লিষ্টদেরই কাজ করতে হবে।

কোটি টাকা প্রণোদনাতেও অনিয়ম ছাড়ছে না

বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহকে সরকারি আর্থিক অনুদান প্রদানের নীতিমালা প্রণয়নের পর ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে অনুদান দেয়ার কাজ শুরু হয়। ওই বছর ৯১টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রকে ১ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়। একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে দেড় কোটি টাকা দেয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০টি বেসরকারি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রকে দেড় কোটি টাকা দেয় সরকার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) উর্মি দে দৈনিক বাংলাকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো কাজের উৎসাহ দিতেই সরকার এই কার্যক্রম চালু করেছে।

তবে অভিভাবকরা বলছেন, নিরাময় কেন্দ্রগুলো সরকারের অনুদান নিলেও সেবার মান বাড়ায় না। ভুক্তভোগীদের যে দুর্ভোগ সেটি থেকেই যায়।


ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিদ্যুৎহীন দেড় কোটি মানুষ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব থামলেও এর প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি এখনো চলছে। এ অবস্থায় সাগরে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ঢেউ। স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে। এ অবস্থায় দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ১ কোটি ৫৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এসব গ্রাহকের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। অনেক স্থানে বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতি ১৫-১৬ ঘণ্টা অতিক্রম করেছে। ঝড় থেমে গেলে সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন বিদ্যুৎকর্মীরা।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১ কোটি ৫৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড় কমে যাওয়ার পর দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে দিতে আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রকৃত চিত্র এখনো জানা যায়নি।

পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, উপকূলীয় কয়েকটি জেলার সাগর তীরবর্তী উপজেলাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের লাইন চালু থাকলে জান-মালের ক্ষতি হতে পারে। আবার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেলে দীর্ঘমেয়াদে সেগুলোর ক্ষতি হতে পারে, যা মেরামত করতে অন্তত সাত দিন সময় প্রয়োজন। এসব দিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১০

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারা বাংলা ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মোট ১০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় ছয়টি জেলায় তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে তিনজন, ভোলা ও বরিশালে দুইজন এবং সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মারা গেছেন।

আজ সোমবার ভোরে বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকায় বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন।

পুলিশ জানিয়েছে, চারজন রেন্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন। বাতাসের তীব্রতায় আকস্মিক পাশের চারতলা ভবনের একটি অংশের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হোটেল মালিক লোকমান ও কর্মচারী মোকছেদুল। আহত হন কর্মচারী সাকিব। তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

রেমালের তাণ্ডবে ভোলায় মারা গেছেন শিশুসহ দুইজন। এর মধ্যে বসতঘরে চাপা পড়ে মারা যান মনেজা খাতুন নামে এক নারী। তিনি লালমোহন উপজেলার চর উমেদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, রাতে মনেজা খাতুন তার এক নাতিকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। ঝোড়ো বাতাসে টিনের ঘর ভেঙে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, রাতে বাবা-মার সঙ্গে ঘু‌মিয়ে ছিল শিশু মাইশা। ভোরের দিকে ঘূ‌র্ণিঝড় রেমালে তাদের ঘরের পাশে গাছ ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মাইশার মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন ওই প‌রিবারের আ‌রও তিনজন।

আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল এলাকায় দেয়াল চাপায় মারা যান এক পথচারী। স্থানীয়রা জানায়, ঝড়ের সময় ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। এ সময় একটি দেয়ালের পাশে আশ্রয় নেন সাইফুল ইসলাম হৃদয়। হঠাৎ সীমানা দেয়ালটি ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে মারা যান হৃদয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে।

পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে দুমকি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়া‌নি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা।

পটুয়াখালীর বাউফলে ঘূর্ণিঝড় রিমালে মৃত্যু হয়েছে মো. আব্দুল করিম নামে এক পথচারীর। আজ সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যান। একইদিন বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্লা‌বিত এলাকা থেকে বোন ও ফুফুকে রক্ষা করতে গিয়ে স্রোতে ভেসে প্রাণ হারান শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক।

কুমিল্লায় বিদ্যালয়ে ক্লাসরত অবস্থায় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

আজ সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সাইফুল ইসলাম সাগর সদর দক্ষিণ উপজেলার শাকতলা গ্রামের অলি হোসেনের ছেলে। সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: বাগেরহাটে আনুমানিক ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতভর তাণ্ডবের পর আজ সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের তীব্রতা কমলেও বৃষ্টিপাত থামেনি।

জানা যায়, রেমালের প্রভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে জেলার ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো জেলা। এছাড়া জেলার প্রায় শতাধিক গ্রাম ৬ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ঘেরে। জেলার মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় সাড়ে ৩হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে আনুমানিক ৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ১ হাজার ৫শ ৮১ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলা উপজেলায় সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। আবহাওয়া পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে গতকাল রাতে জেলার ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ও কয়েক হাজার গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছিলো। তাদের জন্য শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। প্রয়োজন হলে নগদ অর্থ ও বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: ভোলায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে নারী নিহত

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় আজ সোমবার ভোরে প্রচণ্ড বাতাসে ঘর ভেঙে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর বাসসের।

প্রাণ হারানো ৫৪ বছর বয়সী ওই নারীর নাম মনেজা খাতুন। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এতে ঘটনাস্থলে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তার বাবার নাম সিদ্দিক মাঝি। নিহতের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেতে ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। একই সঙ্গে ৭ হাজার ৯০০ গবাদি পশু অবস্থান নিয়েছে মুজিব কেল্লাগুলোতে। রাতের জোয়ারে জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও, ভাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে যায়।

তিনি বলেন, ‘রিমালের প্রভাবে জেলার গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ঘর বাড়িরও। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে কাজ করছি।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়া বইছে উপকূলীয় জেলা ভোলায়। দুপুর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও রাত থেকে ভারী বর্ষণ চলছে। সেই সাথে তীব্র বাতাস বইছে। উত্তাল রয়েছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে পুরো জেলা।

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালে পটুয়াখালীতে গাছ পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৭ মে, ২০২৪ ১৫:১১
পটুয়াখালী প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় বসতঘরে গাছ পড়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। উপজেলার পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়া‌নি সুইসগেট এলাকায় আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।‌

প্রাণ হারানো ৭০ বছর বয়সী জয়নাল হাওলাদার ওই এলাকার বাসিন্দা।

পাঙ্গা‌শিয়া ইউ‌নিয়নের চেয়ারম‌্যান নজরুল গাজী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রচণ্ড বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সময় হঠাৎ দু‌টি বড় বড় চাম্বল গাছ জয়নাল হাওলাদারের টিনের ঘরের ওপ‌র পড়লে ঘরের মধ্যে তি‌নি মারা যান।

তবে জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম জানান, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক স‌মস‌্যার কারণে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না, যে কারণে বিষয়‌টি তার জানা নেই।

চেয়ারম‌্যান নজরুল গাজী জানান, তার ইউ‌নিয়নের ১, ২, ৩ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ওই চার‌টি ওয়ার্ডের বা‌সিন্দাদের তি‌নি কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারেননি। যার ফলে তারা সবাই নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন।

তি‌নি জানান, সকালে যখন প্রচণ্ড বেগে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃ‌ষ্টি হচ্ছিল তখন জয়নাল হাওলাদার ও তার স্ত্রী ঘরে ছিলেন। ঘটনার সময় জয়নালের স্ত্রী রান্নাঘরে কাজে ব‌্যস্ত ছিলেন। আর জয়নাল ছিলেন ঘরের বারান্দায়। এ সময় ঘরের পাশে থাকা দু‌টি বড় বড় চাম্বল গাছ টিনের ওপরে পড়লে তা সরাস‌রি জয়নালের মাথায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

চেয়ারম‌্যান বলেন, ‘নেটওয়ার্ক সমস‌্যার কারণে তাৎক্ষণিক বিষয়‌টি প্রশাসনকে অবহিত করা সম্ভব হয়‌নি, তবে সঙ্গে সঙ্গে আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছি সবাই যাতে জানতে পারে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ১৯ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৭ মে, ২০২৪ ১৪:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় বেশ কিছু অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কথা ভেবে উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয় ধাপের ১৯টি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলাগুলো হলো- বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, বরিশাল জেলার গৌরনদী, আগুনঝারা, পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকি, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া, ভোলা জেলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, বরগুনা জেলার বামনা, পাথরঘাটা এবং রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি।

আজ সোমবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম এই তথ্য জানান।

ইসি সচিব বলেন, ‘মূলত আগামী ২৯ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ১০৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করতে মাঠ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যেই গতকাল রোববার সন্ধ্যায় থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হেনেছে। যার ফলে কোথাও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং ৯ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষিত হয়। এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী যেসব নির্বাচনী এলাকাগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ, বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, কোথাও কোথাও গাছ উপড়ে গেছে এবং কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোট ১৯ উপজেলার ভোট আপাতত স্থগিত হয়েছে। এই ১৯টি উপজেলার ভোট স্থগিতের ফলে আগামী ২৯ মে ৯০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ১৯ উপজেলায় এখনও পানি জমে আছে। যার ফলে স্থানীয় প্রশাসন এসব এলাকার ভোট পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করেছে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বাগেরহাট জেলা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ মে, ২০২৪ ১৩:১৪
বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সম্পূর্ণ বাগেরহাট জেলা। গতকাল রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাস এখনো অব্যাহত রয়েছে।

জেলার মোংলা, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, ঝড়ে এখানকার প্রায় আট হাজার কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, ব্যাপক গাছপালা বিধ্বস্তসহ বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা চাকশ্রী গ্রামের এক চিংড়ি চাষি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী ও খালে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে জোয়ারের পানির চাপে ঘেরের বাঁধ ভেঙে প্রায় এক লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে।’

একই এলাকার এক ঘের ব্যবসায়ী বলেন, ‘জোয়ারের পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। রাত থেকে আমার ঘেরসহ এখানকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আছে।’

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বারইখালি এলাকার আব্দুল্লাহ আল জিমি বলেন, বাতাসে আমাদের বাড়ির গাছগাছালি ভেঙে গেছে। এলাকা পুরো পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার ঘরের ভিতরে প্রায় এক ফুট পানি এবং বাইরে তিন চার ফুট পানিতে তলানো। কাল রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম কিন্তু ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে এসেছি। রান্নাবান্না না করতে পেরে কাল রাত থেকে এখনো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।

শরণখোলার তাফালবাড়ি এলাকার নাজমুল জানান, গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একটানা বাতাস হচ্ছে। ‌এই বাতাসে আমাদের বেশ কিছু গাছ পড়ে গেছে। আমাদের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।

তাফালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের একটি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সেখানকার মানুষরা অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তবে এখনো অনেকে নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখনো প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে।’

বাগেরহাটের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলনে, ‘রোববার দুপুরের পর থেকে এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিষয়:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ৭ জনের প্রাণহানি

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে দেশের উপকূল অঞ্চলে। এর প্রভাবে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রামে ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

আজ সোমবার সকালে আবহাওয়া অফিস বলছে, দুর্যোগের আগেই সঠিক পূর্বাভাস এবং মানুষের সচেতনতায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়েও তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে দুর্বল বাঁধের কারণে ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে উপকূলে। পটুয়াখালীতে উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে একজন এবং সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একজনের প্রাণ গেছে। মোংলায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে শিশুসহ দুইজন। এ ছাড়াও বরিশাল, ভোলা ও চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ রেমাল উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে খুলনার কয়রার নিকট অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিতে পারে।

এরই মধ্যে রেমাল উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে কয়রা, খুলনার কাছে অবস্থান করছে। এরপর ধীরে ধীরে সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ শান্ত হয়ে উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত বাড়বে ঢাকাসহ এর আশপাশের এলাকায়। সকাল থেকে ঢাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো।’

বিষয়:

ভূমিধস আতঙ্কে রোহিঙ্গারা, ক্যাম্পে বাড়তি সতর্কতা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
উখিয়া ও টেকনাফ প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর কারণে ভূমিধসপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। ঝড়ের প্রভাবে রোববার সকাল থেকে টেকনাফ-উখিয়ার কিছু জায়গায় দমকা ঝড়ো হাওয়া দেখা দিয়েছে। সেখানকার পাহাড় ও বনে ঝুঁকিতে থাকা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, তারা ভয়ে আছেন। ভারী বৃষ্টি হলে ভূমিধস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবকসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এ বিষয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪-এপিবিএনের এসপি আরেফিন জুয়েল বলেন, নিরাপদ ও সতর্ক থাকতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পে দাতা সংস্থা সেন্টারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রোহিঙ্গাদের বসতি পাহাড়ি এলাকায়। তাই ভারী বর্ষণ হলে ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা ফায়ার সার্ভিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এছাড়া পরিস্থিতি দেখে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হবে।’

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস পাহাড়বেষ্টিত এই ক্যাম্পগুলোতে। এখানকার ঘরগুলো ত্রিপল, বাঁশের কাঠামোতে তৈরি, ক্ষতি কমাতে এরই মধ্যে ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে করা হচ্ছে মাইকিং।

উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. সিদ্দিক বলেন, যারা পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তুলেছে, তারা ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে ভূমিধসের ভয়ে আছেন। আর যারা নিম্নাঞ্চলে থাকছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের মাঝেও। এ ছাড়া মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে।

উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমার বাড়ি পাহাড়ের নিচে, আগেও বৃষ্টির কারণে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মাইকিং চলছে, ভয়ে আছি জানি না কী হবে?’

আরআরআরসি কার্যালয় জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ক্যাম্পে স্কুল ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যাম্পে এপিবিএন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মী বাহিনীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরাও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। তিন হাজারের বেশি ভলান্টিয়ার প্রস্তুত আছে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন জানান, ক্যাম্প প্রশাসন ও কর্মরত সহযোগী সংস্থাগুলোর সমন্বিত চেষ্টায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সকালে আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাসহ ক্যাম্পে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ে ঝুকিঁপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পাশের স্কুল ও খাদ্য বিতরণ সেন্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. রফিক বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত আনতে পারে এমন আশঙ্কার খবর ক্যাম্পে প্রচার করা হচ্ছে। পাহাড়ের তীরে ঝুপড়ি ঘর হওয়ায় তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নিলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

‘স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত মসজিদ ও লার্নিং সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগে অবহেলা না করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য মাইকিংসহ নানাভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে।


রেমালের প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে আজ রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর আগেই লঞ্চ বন্ধ ঘোষণা করে। এ রুটের যাত্রীদের বিকল্প হিসেবে ফেরিতে নদী পারাপার হতে অনুরোধ করেছে।

আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতি, দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, ‘নিয়মমাফিক গতকাল শনিবার রাত ৯টার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সকল ধরনের লঞ্চ বন্ধ ছিল। আজ রোববার সকাল সোয়া ৬টা থেকে পুনরায় লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর বন্ধ হলেও আমাদের এই রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে বাতাস সৃষ্টি হলে নদী উত্তাল হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল পৌনে দশটা থেকে আবার লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেই। এর আগ পর্যন্ত এই রুটে ছোট-বড় মিলে ১৭টি লঞ্চ ছিল। লঞ্চগুলোকে ঘাটের অদূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।’

লঞ্চে যাত্রী পারাপার হয়, এমন একটি পরিবহনের ঘাট তত্বাবধায়ক ফিরোজ শেখ বলেন, ‘সকালে প্রথম একটি পরিবহনের যাত্রী লঞ্চে নদী পাড়ি দেয়। পরবর্তীতে নদী বেশি উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হলে আমরা ফেরিতে যাত্রী পারাপার শুরু করি। এখন তো লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে লঞ্চের সকল যাত্রী এখন ফেরিতেই নদী পাড়ি দিচ্ছেন।’

দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদী উত্তাল থাকলেও যানবাহনবোঝাই ফেরিগুলো ধীরগতিতে নদী পাড়ি দিচ্ছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে তেমন যানবাহন দেখা না গেলেও নদী পাড়ি দিতে আসা কিছু গাড়িকে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

এছাড়া লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট থেকে একটু দূরে নিরাপদ স্থানে লালু মন্ডল পাড়ায় লঞ্চগুলোকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ফাঁকা পন্টুন পড়ে আছে।’

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সকাল থেকে নদীপথে সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। তবে এই নৌপথ অনেকটা স্বাভাবিক থাকায় লঞ্চ মালিক সমিতি লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রাখে। তাদের পুনরায় বন্ধ রাখার তাগিদ দিলে পরবর্তীতে সকাল ৯টার পর পর চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেন।’

অনেক সময় কর্তৃপক্ষ বলার পরও স্থানীয়রা নদীর অবস্থা বুঝে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রাখেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘নদীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই লঞ্চ চালু করা হবে।

তবে যাত্রীদের নদী পাড়ি দিতে লঞ্চের পরিবর্তে ফেরিতে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এই রুটের লঞ্চগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি।’


‘রেমাল’- এ কাঁপছে উপকূল

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আওয়াল শেখ, খুলনা ব্যুরো

প্রতিবছরই কোন কোন ঝড়ের কবলে পড়তে হচ্ছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের ফলে জান-মাল রক্ষার সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের।

এবছরও প্রবল শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত করতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে ঝড়ের অগ্রভাগে অংশের প্রভাব শুরু হয়। ধীর ধীরে প্রভাব বাড়ছে। মধ্যে রাতে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেহাটের উপকূলে প্রবল বেগে আঘাত করবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে উপকূল প্লাবিত হতে পারে।’

ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিশেষ করে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উপকূলের মানুষ। আগের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে গৃহহারা হয়ে বেড়িবাঁধ অথবা উচু কোন স্থানে টং ঘর বেধে বসবাসকারি লোকেরা ফের বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।

এ বছর খুলনা, বাগেরহাটে ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে সব থেকে ঝুকিতে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা। সেখানের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ খুবই দুর্বল রয়েছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ রক্ষায় নিজেরাই কাজ শুরু করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে গতকাল শনিবার রাত থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে গ্রামবাসি। রাতে আলো জ্বালিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে মাটির কাজ করেছেন।

আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের রুহুল আমিন মোড়ল জানান, রোববার সকাল থেকে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। যেনতেনভাবে সংষ্কার করা পাউবো’র এই বেড়িবাঁধ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের কারণে যেকোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এম সালাউদ্দীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগরকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১২৯ কিলোমিটারের মধ্যে সাত/আটটি পয়েন্টের প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে মাটি ফেলে উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে বাঁধের ভাঙন ও ধস ঠেকানোর কাজ চলছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, বিভাগের আওতাধীন ১৫ এর অধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। এই মুহুর্ত্বে ৫/৬টি পয়েন্টে কাজ চলছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও জিও রোল মজুদত রয়েছে। এখন আমরা ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্টে বেড়িবাঁধে জিও রোলের কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো পয়েন্টে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

ক্ষত মোকাবিলায় প্রস্তুতি

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে এ মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। একইসঙ্গে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, ও কোস্টগার্ড কাজ করবে।

এছাড়া বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ,৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৬৪৩.৪০০ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপপরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৩০টি টিম গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে খুলনায় ১৪টি, বাগেরহাটে ১০টি এবং সাতক্ষীরায় ৬টি ফায়ার স্টেশনের টিম কাজ করছেন। টিমের সদস্যরা মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি রেসকিউ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে আনাসহ যাবতীয় কাজ করবে। জল ও স্থল উভয় পথে ফায়ার সার্ভিসের টিম এবং যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খুলনা সদরদপ্তরে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে ২০ সদস্যের স্পেশাল টিম। খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল।

সুন্দরবনে বাড়তি সতর্কতা

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনসহ সকল টহলফাঁড়িতে অবস্থানরত বনকর্মীদের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের লোকালয়ে ফিরতে পরামর্শ দিয়ে তাদের উদ্ধারে বনকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার খবরে বনবিভাগের সব কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে তাদের নিরাপদ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীদেরও নিরাপদে রাখা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সার্বক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মোংলা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, এই মুহূর্তে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়ায় ৪ টি জাহাজ, বেসক্রিক এরিয়ায় ১টি ও জেটিতে ২ টি জাহাজসহ মোট ৬টি বিদেশি জাহাজ রয়েছে। ঝড় থেমে না যাওয়া পর্যন্ত মোংলা বন্দরের সকল প্রকার অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক সকল জাহাজগুলোকে জেটির পাশ ত্যাগ করে চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে নোঙ্গর করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের নিজস্ব জলযান সমূহকে ২ টায়ারে বিদ্যমান বার্থসমূহে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া বন্দর চ্যানেলকে নিরাপদে রাখার জন্য দেশি কার্গো ও লাইটারেজগুলোকে চ্যানেলের বাইরে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বন্দরে আমদানিকৃত গাড়ি নিরাপদে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ও আমদানিকারকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উপকূলে বাববার আঘাত

আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে উপকূলে। তার মধ্যে রয়েছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে সিডর, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু ও ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৪ মে ফণী, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে ইয়াস এবং ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর উপকূলে আঘাত হানে সিত্রাং। এই ১৫ বছরে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিডর ঝড়ে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশর হতিহাসে অন্যতম পাঁচটি বড় ঝড়ের মধ্যে হল একটি সিডর। এ ঝড়ে বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এর মধ্যে খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগি এলাকা ও বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী এলাকা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এছাড়াও সুন্দরবনের বেশ ক্ষতি হয়েছিল। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে উপকূলে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে।’


মোংলায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর ফলে মোংলা বন্দরে নিজস্ব এলার্ট ‘ফোর’ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ রয়েছে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বিদেশী জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ। এছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে দূর্ঘটনা এড়াতে বন্দরে ৬টি বাণিজ্যিক জাহাজ নিরাপদে নোঙ্গরে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোমেলের প্রভাবে আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দমকা বাতাসও বইছে। ফলে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন সাধারণ মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন ও পশুর নদীর পাড়ে বসবাসকারি উপকূলবাসিদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনার জন্য সব কিছুই করা হচ্ছে। এরইমধ্যে অনেকে আনাও হয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখনও যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি তাদেরকে আনার জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলে সতর্কতা মাইকিং প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তারা সুন্দরবনের পাশেই বসবাস করেন। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হেসেন বলেন, 'তার ইউনিয়নে ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের প্রায় সবগুলোতেই উপকূলবাসীকে আনা হচ্ছে। ২৫টি কেন্দ্রের জন্য খিচুড়িসহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছি'।

মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মুনতাসীর ইবনে মহসীন জানান, 'গতকাল শনিবার (২৫মে) থেকেই তারা সতর্ক রয়েছেন। উপকূলবাসীকে প্রতি মুহুর্তে সচেতনতার করার লক্ষ্যে সতর্কমূলক প্রচার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রোববার ভোর থেকে মোংলার পশুর নদী ও সুন্দরবন তীরবর্তী এলাকায় তাদের সদস্যরা অবস্থান করছে। যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।’


জ্বলোচ্ছাসে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন 

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলসহ মোংলায় ১০ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টিসহ দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জ্বলোচ্ছাসে পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে পুরো সুন্দরবন এলাকা।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন কেন্দ্রের মোঃ আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানির চাপ আরও বাড়বে। তবে বণ্যপ্রাণীর কোন ক্ষয়ক্ষতির আশংকা নেই বলে জানান তিনি। আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুরো সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বনবিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে থাকা বনরক্ষীদের এরই মধ্যে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীবাহি নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি কাজ ও রোগিদের কথা চিন্তা করে মোংলা নদীতে ফেরি চালু রাখা হয়েছে। পৌর শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে আনার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হারন অর রশিদ জানান, এই রেমাল মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৯ ৫কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আজ সন্ধ্যা নাগাদ সুন্দরবন ও মোংলা উপকূল অতিক্রম করে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় আছড়ে পড়ার কথা রয়েছে।


banner close